মিশরের পবিত্র আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়—যা শুধু জ্ঞানের বাতিঘর নয়, বরং বিশ্বমানবতার বিবেক—আজ এক তীব্র ঘোষণায় কেঁপে উঠল। শুক্রবার, এক সংবাদ বিবৃতিতে আল-আজহার কর্তৃপক্ষ জায়নাবাদী বাহিনীর ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ভূখণ্ডে হামলার কড়া নিন্দা জানিয়ে বলেছে, “এই আগ্রাসন শুধু একটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন নয়, এটি আন্তর্জাতিক আইন ও মানবতার ওপর সরাসরি হামলা।”
জায়নাবাদী আগ্রাসনকে ‘ঐতিহাসিক বর্বরতার পুনরাবৃত্তি’ আখ্যা দিয়ে আল-আজহার বলেছে, “এই দখলদার কায়েন যা করছে, তা আধুনিক ইতিহাসে সবচেয়ে নির্মম, ঔদ্ধত্যপূর্ণ এবং নীতিহীন দখলদারিত্বের পরিচায়ক।” তাদের মতে, এই আগ্রাসী নীতি গোটা অঞ্চলকে পরিণত করতে চায় এক অনির্ধারিত যুদ্ধক্ষেত্রে, যেখানে নিঃশেষ হয় শান্তির সকল সম্ভাবনা, এবং ধ্বংস হয় জনগণের স্বপ্ন ও স্বাধিকার।
আল-আজহার তার বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে সতর্ক করেছে, এই ধরনের আগ্রাসন কেবল ইরানের জন্য হুমকি নয়, বরং তা সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতাকে নস্যাৎ করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। বিবৃতিতে বলা হয়, “জায়নাবাদী বর্বরতা আমাদের অঞ্চলকে এক গভীর ও বিপজ্জনক বিশৃঙ্খলার মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তাদের দম্ভ, যুদ্ধপ্রবণ মানসিকতা ও আগ্রাসনপ্রিয়তা শান্তি, স্থিতি ও মানবতার পরম শত্রু।”
বিশ্বজনীন বিবেকের প্রতি এক বিশুদ্ধ আহ্বান জানিয়ে আল-আজহার বলেন, “এই মারণ দখলদারিত্বের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না। জাতিসংঘসহ সকল আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং মানবতাবাদী শক্তিগুলোর এখনই দায়িত্ব—এই আগ্রাসন রোধ করা, রাষ্ট্রের সীমান্ত ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা, এবং যুদ্ধের উস্কানিকে প্রতিহত করা। কারণ প্রতিটি অগ্নিসংযোগের নিচে চাপা পড়ে নিষ্পাপ মানুষের জীবন, শিশুদের স্বপ্ন এবং জাতির ভবিষ্যৎ।”
এটি প্রথমবার নয় যে আল-আজহার এভাবে দৃপ্ত কণ্ঠে প্রতিবাদ জানিয়েছে। কিন্তু আজকের এই বিবৃতি যেন ছিল আর্তনাদে মোড়ানো এক আধ্যাত্মিক হুঙ্কার—যা কেবল রাজনৈতিক বিবৃতি নয়, বরং ছিল মানবতার পক্ষে এক দৃঢ় অবস্থান। একটিমাত্র বাক্য যেন সারসত্যের সংক্ষিপ্তসার হয়ে উঠে এসেছে তাদের বিবৃতিতে: “এই আগ্রাসন এক বিশাল আগুন, যা নিঃশেষ করে দিতে পারে সভ্যতার ভিতরকার আলো।”